হিংসা, দূরাশা এবং সচ্চরিত্রের ব্যাখ্যা
হিংসা, দূরাশা এবং সচ্চরিত্রের ব্যাখ্যা
জানা উচিত, হিংসা, (অন্যের কল্যাণ ধ্বংসের আশা করা) জঘন্য হারাম।
এরশাদ হয়েছে-
আমি আশ্রয় প্রার্থনা করি মহান আল্লাহর নিকট হিংসুকের হিংসা থেকে যখন সে হিংসা করে। মহান আল্লাহ সূরা ফালাকে হিংসুকের হিংসা থেকে আশ্রয় প্রার্থনার নির্দেশ দিয়ে উহা সমাপ্ত করেছেন।
হাদীছ শরীফে আছে, তিনটি স্বভাব আছে যেগুলো সমস্ত ভুল ভ্রান্তির মূল উৎস। তোমরা ঐসব স্বভাবকে বর্জন কর এবং সেগুলো সম্পর্কে সর্বদা সাবধান থাক। (১) কিবর অর্থাৎ অহংকার (নিজকে বড় মনে করা এবং অপরকে তুচ্ছ জ্ঞান করা) এ অহংকারের দরুন ইবলিস হযরত আদম (আঃ)কে সেজদা করতে পারেনি। (২) হেরছ-লিপ্সা, এ স্বভাবটি হযরত আদম (আঃ)কে নিষিদ্ধ ফল ভক্ষণে প্ররোচনা দিয়েছিল। (৩) হাসাদ (হিংসা) এটা কাবীলকে হাবীলের হত্যার উপর উত্তেজিত করেছিল। বলা হয়েছে যে, হিংসুক ব্যক্তি নেতৃত্বের মর্যাদা পায় না। আরো বলা হয়েছে, হিংসুক আল্লাহর নিয়ামতের অস্বীকারকারী কেননা, সে মহান আল্লাহর ফয়সালার উপর সন্তুষ্ট নয়। বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ পাকের বাণী- by jals to All
– এখানে জাহেরী ও বাতেনী ফাহেশা বলতে হাতাদের কথা বুঝা হয়েছে। বর্ণিত আছে, তুমি হিংসা পরিহার করা। কেননা, এটা তোমার উপর বিরূপ প্রভাব বিস্তার করবে মাহনূদের (যার সাথে হিংসা করতেছ) উপর প্রভাব বিস্তার করার পূর্বেই। অর্থাৎ এর দ্বারা প্রতিপক্ষের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পূর্বেই হিংসুক নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
আল্লামা আসমাঈ (রহঃ) বলেন, আমি একদা একশ বছর বয়স্ক এক বেদুইন লোককে দেখে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি এত দীর্ঘ বয়স কেমনে পাইলেন? সে উত্তর দিল, আমি হিংসা বর্জন করেছি, তাই আমি এখনো বেঁচে আছি। কথিত আছে, যদি তুমি হিংসা থেকে বাঁচতে চাও তাহলে এটা তোমার
পক্ষে সম্ভব নয় (এর একমাত্র ঔষধ জিকর ও ফিকর) কথিত আছে, মানুষের সমস্ত বিপদাপদ তার হিংসার মধ্যে নিহিত। আমল এর অর্থ হলো, আশা করা তথা দুনিয়াতে বহুকাল অবস্থান করার আন্তরিক কামনা-বাসনা করা।
একথা সত্য যে, যার এ আশা যতদূর বৃদ্ধি পাবে সে তত ধন-সম্পদ অর্জনে মশগুল হয়ে পড়বে এবং মৃত্যুর চিন্তা হতে দূরে সরে যাবে এবং মৃত্যুকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ভুলে যাবে আর সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় হয়ে যাবে যার বিশ্বাস যে, সে অনাগত বহুকাল পর্যন্ত এ জগতে অবস্থান করবে। হাদীস শরীফে আছে, আদম সন্তান বৃদ্ধ হয়ে যায় বটে, কিন্তু তার মধ্যে দুটি স্বভাব বৃদ্ধ হয় না। বরং বৃদ্ধি পায় (১)
লোভ-লালসা (২) দীর্ঘ জীবন লাভের আশা আকাংঙ্খা । হাদীসে শরীফে আরো আছে, আমি আমার উম্মতের জন্য যে বস্তুগুলোর ভয় করি তম্মধ্যে সবচাইতে বেশী ভয়ের বস্তু হলো তার অবৈধ কামনা বাসনা এবং দীর্ঘ হায়াতের আশা আকাংঙ্খা।
অবৈধ কামনা বাসনায় সত্য ও ন্যায় থেকে মানুষকে বিরত রাখে আর দীর্ঘায়ু কামনায় মানুষকে পরকালের কথা ভুলিয়ে রাখে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, জ্ঞানী ঐ ব্যক্তি, যে
তার নফসের নিকট হতে নিয়মিত হিসেব নিকেশ আদায় করে লয় এবং মৃত্যুর পরকালীন জগতের জন্য আমল চালিয়ে যায়। আর দুর্বল ঐ বক্তি যে তার নফসের কামনা বাসনার অনুসরণ করে এবং আল্লাহ পাকের ধার্যকৃত চাইতে অনেক কিছুর আকাংঙ্খা করে ।
ব্যবস্থার জানা উচিত যে, দীর্ঘকাল বাঁচার আশা-আকংঙ্খা সীমিত করা সৌভাগ্যের বড় চাবিকাঠি এবং এটা কলবকে যাবতী হীনতা ও দুরাশা এবং আন্তরিক রোগ-ব্যাধি থেকে পবিত্র করে। আর এটা মানুষের মর্যাদা ও পুরস্কার বৃদ্ধি করে। আখলাকে হামীদা তথা সদগুণাবলীর ব্যাখ্যা আমাদের কিতাব এর হারাম অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
সদগুণাবলির সংখ্যা প্রায় হাজারের নিকটবর্তী
যেমনঃ (১) সহিষ্ণুতা, (২) ইলম (৩) বিনয় (৪) ভালবাসা (৫) নম্রতা (৬) উজ্জল মুখ (৭) মিষ্টি কথা (৮) ক্ষমা প্রদর্শন (৯) সদ্ব্যবহার বিশেষ করে অত্যাচারীর সাথে (১০) আত্মীয়তার বন্ধন যে আত্মীয় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে (১১) দয়া-অনুগ্রহ প্রদর্শন বিশেষ করে দুর্বলদের প্রতি (১২) পীর মোর্শেদ ও পীর ভাইদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা, বিশেষ করে নেককার লোকদের প্রতি, (১৩) বিশুদ্ধ আকীদা পোষণ ১৪) তওবা (১৫) গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকা (১৬) কৃত অপরাদের জন্য পরিতপ্ত হওয়া (১৭) আল্লাহ পাকর নিকট লজ্জিত হওয়া (১৮) আল্লাহ পাকের দিকে রুজু থাকা (১৯) আনুগত্য করা (২০) ধৈর্য্য (২১) সন্দেহ থেকে পরহেজ করা, (২২) সংসারাসক্তি বর্জন করা (২৩) প্রদত্ত নেয়ামতে তুষ্ট থাকা (২৪) আল্লাহ পাকের ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকা (২৫) নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা (২৬) আল্লাহ পাকের প্রশংসা করা (২৭) সত্য কথা বলা (২৮) অংগীকার বাস্তবায়ন করা (২৯) আমানত আদায় করা (৩০) খেয়ানত বর্জন করা (৩১) প্রতিবেশীর অধিকারের প্রতি লক্ষ্য রাখা (৩২) অপরকে খাদ্য দান (৩৩) সালামের আদান প্রদান (৩৪) সুন্দর কথা বলা (৩৫) সুন্দর চমৎকার আমল (৩৬) পরকালের প্রতি ভালবাসা (৩৭) দুনিয়ার প্রতি বিরক্তি (৩৮) হিসেব নিকেশের জন্য ব্যকুলতা (৩৯) মুমিনদের জন্য দয়াপরবশ হওয়া (৪০) কষ্টদায়ক বস্তুকে দূর করা (৪১) বিপদাপদে ধৈর্য্যধারণ করা (৪২) মহান আল্লাহর প্রতি গভীর ধ্যান ও খেয়ালে থাকা, (৪৩) সৃষ্টি জীব হতে বিমুখতা অবলম্বন করা (৪৪) সত্য ও ন্যায়ের উপর দিলকে শান্ত রাখা (৪৫) অবৈধ কামনা বাসনা ও শারিরীক চাহিদা থেকে নফসকে বঞ্চিত-নৈরাশ রাখা (৪৬) ‘পার্থিব ভোগ বিলাস ও সুখ সমৃদ্ধি থেকে নফসকে বাধা দেয়া (৪৭) আল্লাহ পাকের আজাবের ভয় করা (৪৮) তার রহমতের আশা রাখা (89) দানশীলতা (৫০) মানুষের বেয়াদবী ক্ষমার নজরে দেখা। (৫১) ভালবাসা প্রদান করা মনোভাব হওয়ার ভয় করা। স্থাপন করা (৫২) মর্যাদাবোধ থাকা (৫৩) সহানুভূতি প্রদর্শন (৫৪) আতিথি পরায়ন ও সৌজন্যশীল হওয়া, (৫৫) পার্থিব ব্যাপারে অপরকে অগ্রাধিকার (৫৬) মানুষকে উপদেশ প্রদান করা (৫৭) নিজকে দোষারোপ থেকে পবিত্র রাখা, (৫৮) সওয়াবের আশা করা (৫৯) মুরুব্বীদের প্রতি নিজকে সমর্পন করা (৬০) আল্লাহ পাকের প্রতি ভরসা করা, (৬১) বীরোচিত পোষণ করা (৬২) উচ্চাকাংখা রাখা (৬৩) উন্নতমনা (৬৪) মহান আল্লাহকে ভালবাসা, (৬৫) তাঁর নবীদেরকে ভালবাসা, (৬৬) তাঁর অলীগণকে ভালবাসা, (৬৭) আল্লাহর মহব্বতে সকল বিশ্বাসী বান্দাদের কে ভালবাসা (৬৮) সর্বদা আল্লাহ প্রাপ্তির আশা করা (৬৯) আল্লাহ পাক থেকে বিচ্ছিন্ন (৭০) জ্ঞানী হওয়া (৭১) চিন্তাভাবনা করা (৭২) ধীরস্থিরতা অবলম্বন (৭৩) নফসের হিসেবে নিকেশ নেয়া (৭৪) ন্যায়-নীতির অনুসরণ করা (৭৫) স্রষ্টা ও সৃষ্টির প্রতি সুধারণা রাখা (৭৬) নফসের সাথে জিহাদ করা, (৭৭) পার্থিব বিষয়ে ঝগড়া, কলহ পরিহার করা (৭৮) দীনি বিষয়ে স্বী রায়কে প্রাধান্য দেয়ার জন্য বিতর্কে লিপ্ত হওয়া (৭৯) মৃত্যুকে স্মরণ করা (৮০) দীর্ঘায়ু কামনা না করা (৮১) ঈমানের উপর সুদৃঢ় থাকা (৮২) পবিত্র কুরআনে পাণ্ডিত্য লাভ করা, (৮৩) অন্তরের কু-খেয়াল ও ধারণা-গুলো বর্জন করা (৮৪) অন্যের নিকট চাওয়া ও পাওয়া থেকে দূরে থাকা (৮৫) দারিদ্রকে জারী রাখা (৮৬) আল্লাহর নিকট সাহায্য ও আশ্রয় প্রার্থনা করা (৮৭) সর্বাস্থায় সব কাজে এখলাছ অবলম্বন করা (কৃত্রিমতা পরিহার করা)
অতএব, সালেকের জন্য ইবাদতে কঠোর পরিশ্রম করা এবং নফসের সাথে জিহাদ করা অত্যাবশ্যক যাতে সে উপরোক্ত সদগুণাবলীর দ্বারা ভূষিত হয়। কেননা, মহান আল্লাহ ও তদীয় রাসূলের নৈকট্য লাভের জন্য ঐ সব গুণে গুণান্বিত হওয়া ব্যতীত অন্য কোন পন্থা শরীয়তে নেই। বস্তুতঃ পার্থিব ও পারলোকিক সৌভাগ্য অর্জন উহার উপরই নির্ভরশীল । হযরত রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কিয়ামতের দিন আমার প্রিয়তম এবং অধিক নিকটবর্তী ঐ ব্যক্তি হবে, যে তোমাদের মধ্যে উত্তম চরিত্রের অধিকারী। তিনি আরও বলেছেন, মীযানে যে সব নেকী ওজন দেয়া হবে। তন্মধ্যে সচ্চরিত্রের ওজন হবে সবচাইতে ভারী। আরো তিনি এরশাদ করেছেন, সচ্চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তি তার সচ্চরিত্রের কল্যাণে কাল কিয়ামতে নামাযী ও রোজাদারের মর্যাদায় পৌছে যাবে শব্দটি আরবী যা খুকুন ও খুলুকুন উভয়রূপে উচ্চারণ করা যায়।
যার শাব্দিক অর্থ হলো স্বভাব চরিত্র বা প্রকৃতি । উহার বহুবচন আখলাক। মহাক্কেকীনে ওলামায়ে কেরামের পরিভাষায়, খুলুকের অর্থ ঐ স্বভাব বা চরিত্র যা মহান আল্লাহ তার প্রিয় হাবীব (সাঃ) এর জন্য পছন্দ করেছেন এবং যার ঘোষণা তিনি নিম্নোক্ত আয়াতে দিয়েছেন- অর্থাৎ হে নবী! আপনি উত্তম পন্থা অবলম্বন করুন, সত্য ও ন্যায়ের আদেশ দিন এবং অজ্ঞলোকদের থেকে বিমুখতা প্রদর্শন করুন। কারো মতে, প্রশংসনীয় স্বভাব-প্রকৃতি এবং উত্তম গুণাবলীর সমষ্টির নাম খুলুক যদ্বারা বান্দা যাবতীয় নেকী ও কল্যাণের নিকটবর্তী হয় এবং যাবতীয় পাপাচার ও অকল্যাণ থেকে দূরে থাকতে সক্ষম হয়। কারো মতে, খুলুক হলো সত্য ও ন্যায়ের বাস্তবায়ন এবং সৃষ্টির পক্ষ হতে আগত যাবতীয় গঞ্জনা ব্যঞ্জনা অকাতরে ও নির্দিধায় গ্রহণ করা, সহ্য করা। কারো মতে, খুলুক হলো তোমার থেকে যা কিছু নেয়া হয়েছে উহা কম মনে করা এবং তোমাকে যা
কিছু দেয়া হয়েছে উহা অধিক মনে করা। কারো মতে খুলুক হলো যাবতীয় অপছন্দনীয় ব্যবহার আচরণ বিনয় ও সদাচারের সাথে সহ্য করা এবং কারো মতে, খুলুক হলো কষ্টদায়ক বস্তুকে অপসারণ করা এবং অর্পিত দায়িত্ব যথারীতি বহন করা। কারো মতে খুলুক হলো কষ্টদায়ক বিষয় দূর করা স্বজাতীয় ও বিজাতীয়ের পক্ষ হতে যাবতীয় জুলুম ও অত্যাচার সহ্য করা। কারো মতে, সচ্চরিত্র হলো দাসত্বের যাবতীয় গুণমর্যাদার মধ্যে সর্বোত্তম মর্যাদা ও গুণ যদ্বারা সত্যিকার বিরোচিত মানবের যথার্থ যোগ্যতা প্রকাশিত হয়। মানুষ তার বাহ্যিক আকৃতির দ্বারা পরিবেষ্টিত কিন্তু সচ্চরিত্রের দ্বারা সে সুপ্রসিদ্ধি। মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মহত চরিত্র মাধুর্য দ্বারা বিশেষিত করেছেন। এবং তিনি তাঁর হাবীবকে মহান চরিত্র দ্বারা এতই প্রশংসা করেছেন যেমনটা তিনি তাঁর অন্য কোন গুণ দ্বারা প্রশংসা করেননি। এরশাদ হয়েছে- “
হে হাবীব! নিশ্চয় আপনি সুমহান চরিত্রের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত। বলা হয়েছে যে, মহান আল্লাহ তাঁর হাবীবকে মহান চরিত্রের দ্বারা ভূষিত করেছেন। কেননা, তিনি উভয় জগতের যাবতীয় কাজ সমাধা করেছেন এবং
একমাত্র বর্ণিত আছে যে,
সচ্চরিত্রের নিদর্শন সমূহের মধ্যে একটি মানুষ ঐ ব্যক্তির কারণে মনঃক্ষর বা উদ্বিগ্ন না হওয়া যে ব্যক্তি একই কাতারে তার পাশে দাড়িয়েছে অপবা উদ্বিগ্ন না হওয়া ঐ ব্যক্তির কারণে, যে মঙ্গলিশে তার উপরের আসনে বসেছে। আর অসচ্চরিত্রের নিদর্শন সমূহের একটি নিদর্শন হলো, কারোর দৃষ্টি অপরের মন্দ স্বভাবের উপর নিপতিত হওয়া। জনৈক মুহাক্কিক আলেম বলেন, তাসাওফ হলো সচ্চরিত্রের নাম। সুতরাং যার চরিত্রের সৌন্দর্য যত বৃদ্ধি পাবে সে তত বড় সুফী সাধক। আল্লামা হা (রহঃ) বলেন, যে ব্যক্তি চল্লিশদিন পর্যন্ত কোন সৎচরিত্রে চরিত্রবান হবে আল্লাহ পাক উহাকে তার স্বভাবে পরিণত করবেন। আল্লামা আহনাককে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আপনি সহিষ্ণুতার গুণ কার থেকে অর্জন করলেন? তিনি উত্তর দিলেন, কাইস বিন আসেম (রহঃ) থেকে। আমি একদা তাঁর দরবারে বসা ছিলাম, এ সময় তার একজন দাসী গরম ভুনা গোশতের একটি পাত্র নিয়ে আসল। হঠাৎ পাত্রটি তার হাত থেকে খসে গিয়ে কাইল বিন আসেমের ছোট কন্যার উপর পড়ে গেল যদ্ধরুন তাঁর কন্যাটি মারা যায়।
এমতাবস্থায় দাসী ভয়ে দিশেহারা হয়ে যায়। কিন্তু কাইস বিন আলেম (রহঃ) দাসীকে বললেন, তোমার কোন ভয় নেই, তুমি আল্লাহর ওয়াস্তে স্বাধীন। ইব্রাহীম বিন আদহামকে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি কি এ জীবনে কোন দিন খুশি হয়েছেন? তিনি বলেন, দু’বার আমি খুশি হয়েছি। একবার ঐ দিন যে দিন এক লোক এসে আমার উপর প্রস্রাব করেছিল। আরেক দিন ঐ দিন যে দিন আমি বসা ছিলাম। এমতাবস্থায় এক লোক আমাকে কানমলা দিয়েছিল। হযরত ইব্রাহীম আদহাম হতে বর্ণিত আছে, তিনি একদা একটি জংগলের পাশে উপবিষ্ট ছিলেন। এ সময় একজন সরকারী পুলিশ তাঁর পাশ দিয়ে অতিক্রম করতেছিল। পুলিশ জিজ্ঞেস করলো, ওহে! তোমার বাড়ী কোথায়? ইব্রাহীম বিন আদহাম কবরস্থানের দিকে ইংগিত করলেন।
এতদশবণে পুলিশ তাঁর মাথায় আঘাত করে আহত করে দেয় এ কারণে যে, সে তার সাথে ঠাট্টা করেছে। অতঃপর পুলিশ তাকে পরিত্যাগ করে চলে যায়। এ ঘটনার পর পুলিশকে এ মর্মে অবহিত করা হলো যে, আহত ব্যক্তি হলেন ইব্রাহীম বিন আদহাম যিনি খুরাসানের দরবেশ। এ শুনে পুলিশ তাঁর নিকট ফিরে এসে স্বীয় ওজর আপত্তি পেশ করলো। ইব্রাহীম বিন আদহাম বললেন, আপনি যখন আমাকে প্রহার করলেন তখন আমি আপনার জন্য জান্নাতের দরখাস্ত করেছি। তিনি একথা শুনে জিজ্ঞেস করলেন, এটা কেমন করে হয়? তিনি বললেন, এটা এজন্য যে, তুমি আমাকে প্রহার করে আমার জন্য সওয়াবের ব্যবস্থা করেছ।
সুতরাং আমি এতে সন্তুষ্ট নই যে, তোমার পক্ষ হতে কল্যাণ ও সওয়াবের ভাগী হবো। কিন্তু তুমি আমার পক্ষ হতে ক্ষতির ভাগী হবে। তাই কৃতজ্ঞতা স্বরূপ তোমার জন্য আল্লাহ পাকের নিকট বেহেশতের দরখাস্ত করেছি। বর্ণিত আছে, ঐ পুলিশ তাঁর হায়াতে তওবা করে পরবর্তীতে বিশেষ অলী হিসেবে গণ্য হয়। হাতেম আসেমের নিকট যে কোন লোকের অত্যাচার ও বর্ণনা করা হলো, সচ্চরিত্র হলো, অসদাচরণকে বরদাশত করা। একথা শুনে তিনি বললেন, হ্যাঁ, কথাটা ঠিকই বটে কিন্তু স্বীয় নফসের পক্ষ হতে যে কোন আচরণ সহ্য করা সচ্চরিত্রের অন্তর্ভুক্ত নয়।
হযরত লোকমান হাকীম তার পুত্রকে বলেছেন, তিনটি স্বভাবের পরিচয় তিনটি অবস্থায় পাওয়া যায়। (১) সহিষ্ণুতার পরিচয় ক্রোধের সময় (২) বীরত্বের পরিচয় যুদ্ধের সময় এবং (৩) সততার পরিচয় প্রয়োজনের সময়। (৪) জনৈক ব্যক্তির একজন অসৎস্বভাবের দাস ছিল । তাকে বলা হলো, আপনি এ দাসকে কেন রাখতেছেন, একে বিক্রি করে দেন না কেন? তিনি বললেন, আমি এ দাসকে এজন্য বিক্রি করিনা যাতে আমি তার অসৎ ব্যবহারে সহিষ্ণুতার শিক্ষা লাভ করতে পারি ।