শুভ জন্ম
শুভ জন্ম
হিজরী ৪৭১ সনের পবিত্র রম্যান মাসের প্রথম তারিখে পারস্য দেশের অন্তর্গত জীলান নগরীতে এক সম্ভ্রান্ত ও সুপ্রাচীন সৈয়দ বংশে বড় পীর গাওসুল আযম মুহিউদ্দীন মুহাম্মদ আবদুল কাদের জিলানী (রঃ) জনুগ্রহণ করেন। তাঁহার পিতার নাম সৈয়দ আবু সালেহ মুহাম্মদ মুসা জঙ্গী (রঃ) এবং মাতার নাম সৈয়দা উম্মুল খায়ের হযরত ফাতেমা।
উম্মুল খায়ের ফাতেমা (রঃ) বৃদ্ধ বয়সে পুত্রের মুখদর্শন করিয়া আনন্দে উষ্ণু হইয়া উঠিলেন। তিনি এই ধুলার দুনিয়ায় অবস্থান করিয়াও যেন বেহেশতের সুখ অনুভব করিতে লাগিলেন। তিনি নির্নিমেষ নয়নে তাহার ফুটন্ত গােলাপ সদৃশ শিশুটির কচি মুখ হযরত বড় পীর আবদুল কাদের জিলানী (রঃ) পানে চাহিয়া রহিলেন, তারপর আনন্দে আত্মহারা হইয়া শত সহস্র চুম্বনে তাহার কচি গণ্ডদ্বয় সিক্ত করিয়া দিতে লাগিলেন।
নবজাত শিশুর মধ্যে এক আশ্চর্যজনক লক্ষণ দেখা গেল, তাহার রক্তিমাভ কচি ওষ্ঠদ্বয় যেন পুনঃ পুনঃ কম্পিত হইতে লাগিল, যেন তিনি অস্ফুট স্বরে কি যেন বলিতেছেন। অনেকে বলেন- -গাওসুল আযম হযরত বড় পীর সাহেব ভূমিষ্ঠ হইয়াই কালেমা তাইয়েবা ও কালেমা শাহাদত পাঠ করিয়াছিলেন এবং উম্মতে মুহাম্মদীর পাপ মােচনের জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করিয়াছিলেন।
মহানবী (সাঃ)-এর শুভাগমন
যে রাত্রিতে গাওসুল আযম হযরত বড় পীর সাহেব ভূমিষ্ঠ হন, সেই রাত্রিতে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) স্বীয় সহচরগণ সহ আবু সালেহ মুসার গৃহে শুভাগমন করিয়া উচ্চঃস্বরে দরূদ শরীফ পাঠ করিতেছিলেন।
হযরত আবু সালেহ মুসা সেই দরূদের সুমধুর সুর শ্রবণ করিলেন, কিন্তু কোথাও কাহাকেও দেখিতে না পাইয়া অত্যন্ত আশ্চর্যবােধ করিতে লাগিলেন। ইতিমধ্যে তিনি অদৃশ্যবাণী শুনিতে পাইলেন—হে আবু সালেহ! তােমার জীবন ধন্য যেহেতু তােমার ঔরসে আল্লাহর পিয়ারা নবীর পরম বন্ধু জন্মগ্রহণ করিয়াছেন। তুমি এই বালকের নাম রাখিবে মাহবুবে সুবহানী। মুহিউদ্দীন মুহাম্মদ আবদুল কাদের জিলানী নামেও সে জগতে বিশেষভাবে পরিচিত হইবে।
এগার শত শিশুর জন্ম
কথিত আছে যে, যে রাত্রিতে হযরত বড় পীর সাহেব ভূমিষ্ঠ হন, সেই রাত্রিতে জীলান নগরীতে সর্বমােট এগার শত স্ত্রীলােক সন্তান প্রসব করে এবং তাহারা প্রত্যেকেই পুত্র সন্তানই প্রসব করিয়াছিল। পরবর্তীকালে উক্ত এগার শত শিশুর প্রত্যেকেই হযরত বড় পীর সাহেবের সাহচর্যে থাকিয়া উচুদরের আলেম ও কামেল ওলী হইয়াছিলেন।
জন্ম দিনেই রােযা পালন
হযরত বড় পীর সাহেব যেইদিন ভােরে জন্ম গ্রহণ করেন সেইদিন ছিল পহেলা রমযান। তিনি ভূমিষ্ঠ হইয়া সেইদিন সারাদিন মাতৃস্তন পান করেন নাই। এমনকি তাহার মুখে চামচে করিয়া যে দুধ দেওয়া হইয়াছিল, তাহাও তিনি পান না করিয়া ফেলিয়া দিয়াছিলেন, কিন্তু সন্ধ্যার পর হইতে তিনি রীতিমত স্তন পান করিতে থাকেন। পর দিন আবার সারাদিন স্তন পান হইতে বিরত থাকিয়া সন্ধ্যার সময় পুনরায় স্তন পান করিতে থাকেন। এই ভাবে তিনি পূর্ণ একমাসই রমযানের রােযা পালন করিয়াছিলেন। পরবর্তী বৎসর ২১শে শাবান তারিখে আকাশে মেঘ থাকায় রমযানের চাঁদ দেখা পায় নাই। সেইজন্য অনেকেরই মনে সন্দেহ হয় যে, পরবর্তী দিন রােযা রাখিতে হইবে কিনা? পরদিন ভােরে কতিপয় লােক আসিয়া হযরত উম্মুল খায়ের ফাতেমাকে জিজ্ঞাসা করেন—আপনার পুত্র কি আজ সকালে স্তন পান করিয়াছেন? তিনি উত্তর করিলেন—না, আজ শেষ রাত্রি হইতে আমার শিশু পুত্র স্তন পান করা হইতে বিরত আছে। তখন সকলে নিঃসন্দেহে বুঝিতে পারিলেন যে, আজ ১লা রমযান।
এইভাবে হযরত বড় পীর সাহেব তাহার জীবনের প্রথম দিন হইতে শেষ দিন পর্যন্ত প্রতি বৎসরই রমযানের রােযা পালন করিয়া গিয়াছেন—যাহা দুনিয়ার অন্য কোন মানুষই করে নাই।