নফসের বিরোধীতা ইবাদতের মূল বিষয়
নফসের বিরোধীতা ইবাদতের মূল বিষয়
নফসের বিরোধীতা ইবাদতের মূল বিষয় – নফসে আম্মারা হলো শয়তান যার ছয়টি মস্তক রয়েছে।
(ان مخالفة النفس راس العبادة وان النفس الامارة بالسوء شيطان لهـا
سبعة روءس)
জানা উচিত যে, নফসের বিরোধিতা করা এবং উহার চাহিদা গুলো থেকে দূরে থাকা ইবাদতের মূল উৎস। কেননা, এ নফস হলো মহান আল্লাহ ও তাঁর বান্দার মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনে সবচাইতে বড় বাধা। যার উপর নফসের আক্রমণ যতটুকু প্রাধান্য লাভ করবে তার মহব্বতের লাবণ্যতা তত কমতে থাকবে।
যে ব্যক্তি তার নফসের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যাবে সে মূলতঃ নফসকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিবে। একজন জ্ঞানী ব্যক্তির পক্ষে কি করে সমীচীন হবে তার নফসের প্রতি সন্তুষ্ট ও খুশী থাকা? অথচ আল্লাহ পাকের নবী হযরত ইউসুফ (আঃ) বলেন, আমি আমার নফসকে পবিত্র ও ভাল মনে করতে পারিনা। কেননা, সে মন্দ কাজের প্রতি খুবই প্ররোচনা প্রদানকারী তবে মহান আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহ হলে নফসের অনিষ্ট থেকে বাচা সম্ভব।
আল্লামা সাররী সাকতী (রহঃ) বলেন, আমার নফস আমাকে ত্রিশ বা চল্লিশ বছর পর্যন্ত খরবুজা মধুর সাথে মিশিয়ে খাওয়ার জন্য প্ররোচিত করেছে কিন্তু আমি তার অনুসরণ করিনি। জনৈক ব্যক্তিকে বাতাসে বসা অবস্থায় দেখে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি এ মর্তবা কিসে পেলেন? তিনি বলেন, নফসানী চাহিদা পরিত্যাগ করার কারণে বাতাস আমার আয়ত্বে এসেছে।
হযরত ইব্রাহীম খাওয়াস (রহঃ) বলেন, যে ব্যক্তি নফসানী চাহিদা পরিত্যাগ করল অথচ সে উহার স্বাদ অন্তরে উপলব্ধি করলনা সে মূলত তার দাবীতে মিথ্যুক জানা উচিত যে, কুপ্রবৃত্তি হলো শয়তান, উহার সাতটি মস্তক রয়েছে।
(১) শাহাওয়াত, অবৈধ (কামনা-বাসনা) (২) ক্রোধ (৩) অহংকার (৪) হিংসা (৫) কৃপণতা (৬) লোভ ও (৭) রিয়া।
শাহওয়াত- অথাৎ অবৈধ কামনা বাসনা। নফসের এ মস্তক বা হাতিয়ারকে ধ্বংস করার উপায় হলো রিয়াজত সাধনা অর্থাৎ যথারীতি ইবাদত বন্দেগীর উপর অনুশীলন এবং পানাহারের ক্ষেত্রে চতুষ্পদ জন্তুর
সাথে সাদৃশ্য বর্জন। অর্থাৎ চতুষ্পদ জন্তু যেমন পানাহার করে সেরূপ পানাহার না করার এবং পরিমাণে স্বল্পতা এখতেয়ার করা। ক্রোধ নামক শয়তানের মস্তককে দমন করার পন্থা হলো হিলম বা সহনশীলতা। অহংকার নামক মস্তকের মুকাবিলা করা যায় বিনয় ও নম্রতা অবলম্বনের দ্বারা।
আর হিংসা নামক কু-প্রবৃত্তির মুকাবিলা করার পন্থা হলো এই বিশ্বাস করা যে, সমস্ত বস্তুর মালিকানা হলো আল্লাহ পাকের। আর সমস্ত মানুষ হলো তাঁর দাস। অতএব, মালিক ও মাওলা হিসেবে মহান আল্লাহ যাকে ইচ্ছে মান সম্মান ও ধন-সম্পদ ইতাদির মাধ্যমে অনুগ্রহ প্রদর্শন করবেন এ কারণে যে, তিনিই জানেন তাঁর বান্দাদের মধ্যে প্রত্যেকের কল্যাণ কিসে অথবা তাঁর এ ক্ষমতা রয়েছে যে, তিনি যাকে ইচ্ছা তার প্রতি তাঁর যে কোন ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন।
এ ব্যাপারে তিনি নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী। অতএব, কোন বান্দার আরেক জনের প্রতি হিংসা করার কোন প্রশ্নেই হতে পারে না। কৃপণতা ও লোভ লালসা নামক কু-প্রবৃত্তির প্রতিশেধক হলো কানায়াত অবলম্বন করা তথা আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামতের উপর সন্তুষ্ট থাকা এবং নিখুত ও সঠিক ভাবে এ দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে হবে যে, কৃপণ ও লোভী মানুষ নিজকে কেবল অন্যায় ও তুচ্ছ কর্মকান্ডে নিক্ষেপ করে থাকে, জীবনভর নিজের ইজ্জত ও সম্মানকে অপরের কুৎসা রটনা ও সমালোচনার মধ্যে ডুবিয়ে রাখে এবং নিজকে অযথা কষ্ট-ক্লেশ ও বিড়ম্বনার দ্বারা লাঞ্চিত করে আর ধন-সম্পদ অর্জনে হাজারো কষ্ট স্বীকার করেও আল্লাহ প্রদত্ত ঐ সম্পদ দ্বারা সে উপকৃত হতে পারে না।
অতঃপর সব রেখে মৃত্যু বরণ করে অথচ অন্যেরা তার সম্পদ দ্বারা উপকৃত হয়, কিন্তু কৃপণতার গুনাহ ও সম্পদের হিসেবে নিকেশের দায় দায়িত্ব তার মাথায় রয়ে যায় রিয়া নামক নফসানী খায়েশ ও চাহিদার অনুসরণ করা মূলত শয়তানের অনুসরণ করার নামান্তর। অতএব, হে সালেক! তুমি মুজাহাদা ও কঠিন ত্যাগ তিতিক্ষার মাধ্যমে তোমার খাহেশাতে নফসানীর মুকাবিলা কর।
এরশাদ হয়েছে
অর্থাৎ “হে নফসে মুতমায়িন্নাহ! তুমি তোমার রবের দিকে খুশি চিত্তে ও পুরাকৃত মর্যাদায় প্রত্যাবর্তন কর।” (সূরা ফাজর-২৭-২৮)