নখের যত্ন
নখের যত্ন
১। নখ পরিষ্কার ও শুকনো রাখাঃ নখের যেকোনো সমস্যার সূত্রপাত হয় জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের মাধ্যমে। তাই প্রথমেই নিশ্চিত করতে হবে যেন এগুলো বংশবিস্তার করার সুযোগ না পায়। নিয়মিত আপনার নখ পরিষ্কার করুন এবং হাত ধোয়ার পর ভালোভাবে শুকানোর কথা মনে রাখুন। এতে নখের নিচে জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া জন্মানো থেকে বিরত থাকবে। তবে অতিরিক্ত কোন কিছুই ঠিক নয়। নখ বেশি সময় পানিতে ভিজিয়ে রাখলে ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। যখন থালা বাসন বা যে কোন কিছু ধোবেন তখন হাতে গ্লাভস পড়ে নিবেন এবং নখের কাছের ত্বক যেন পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত থাকে সেই বিষয়েও খেয়াল রাখবেন।
একটি টুথব্রাশে একটু লবন নিয়ে সেটি দিয়ে আস্তে আস্তে নখ ও তার আশেপাশের ত্বকে ঘষবেন।এতে নখ সুন্দর ও ভালো থাকবে।
২। নখ কামড়ানো থেকে বিরত থাকুনঃ নখ কামড়ানোর বদ অভ্যাসটি নখের জন্য অনেক ক্ষতিকর। এতে নখ দেখতে যেমন খারাপ হয়ে যায় ঠিক তেমনি মুখের লালার সংস্পর্শে এসে নখ দুর্বল এবং ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। এছাড়াও এতে ত্বকের ক্ষতি হয় এবং হাত থেকে জীবাণু মুখে প্রবেশ করে যা শরীরের পক্ষেও ক্ষতিকারক।
৩। ত্বকরন্ধ্র বা কিউটিকল এর যত্নঃ নখের চারপাশের ত্বক খুবই সংবেদনশীল থাকে এবং সহজেই ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু এদের আক্রমন করে। তাই এদের সঠিক যত্ন দরকার। যদি এরা ক্ষতিগ্রস্ত দেখায় তাহলে নখ কাটার সময় সাবধানে কাটতে হবে। কখনই এগুলো কামড়ানো বা খোঁচানো যাবে না। সবসময় এদের মএশ্চারাইজ করে রাখতে হবে। নারকেল বা অ্যামন্ড তেল দিয়ে ভালোভাবে ম্যাসেজ করতে হবে।
৪। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করাঃ একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর নখ ধুয়ে এবং স্যানিটাইজড করে পরিষ্কার রাখতে হবে। নখ বেশি লম্বা করতে দেয়া যাবে না, এতে নখে ময়লা প্রবেশের পথ সহজ হয়ে যাবে। প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক যেমন টি ট্রি অয়েল নখে লাগাতে পারেন যা নখকে জীবাণুর হাত থেকে রক্ষা করবে।
৫। ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারঃ শুষ্কতা ও রুক্ষতা নখ ও ত্বক উভয়ের জন্য ক্ষতিকারক। নখ খুবই সংবেদনশীল এবং সহজেই ভেঙ্গে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। নখকে শক্তিশালী করার জন্য ময়েশ্চারাইজ করা জরুরী। এর জন্য হ্যান্ড ক্রিম, বা অন্যান্য ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন।
৬। নিয়মিত নখ কাটাঃ দুই এক সপ্তাহ পর পর নিয়ম করে নখ কাটা উচিত। প্রথমে নখ সোজা করে কাটতে হবে। এরপর চারকোনা বা গোল করে বাকি অংশ কেটে ফেলতে হবে।
৭। জেল এবং অ্যাক্রিলিক ব্যবহার না করাঃ এগুলো দেখতে যদিও শুন্দর,তবে এসব ব্যবহার করলে নখের অনেক ক্ষতি হয়। অ্যাক্রিলিক পাউডারে অনেক কেমিক্যাল থাকে যা নখের জন্য ভালো নয়।
৮। নখ একই দিকে সমান করাঃ নখ যখন সমান করা হয় তখন সর্বদা একইমুখী হওয়া উচিৎ। এতে নখ সুন্দর, মসৃণ হয়। যদি একই দিকে তা না করা হয়, তাহলে নখ দুর্বল এবং ভেঙ্গে যেতে পারে। এছাড়া যদি একই দিকে ফাইল না করা হয়, তাহলে কখনই নখকে সুন্দর আকৃতি দেয়া যাবে না। প্রথমে কোনা থেকে শুরু করে মাঝখানে এবং মাঝখান থেকে অন্য কোণা এইভাবে করতে হবে।
৯। জলীয় ম্যানিকিওর ব্যবহার না করাঃ এই মানিকিওর ব্যবহার করলে নখ অধিক পরিমাণে জল শোষণ করে ফেলে এতে নখের আকৃতি পরিবর্তিত হয়ে যায়। এই অবস্থায় যদি নেইল পলিশ ব্যবহার করা হয় তাহলে নখ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলে নেইল পলিশ ফেটে যেতে পারে । তাই এসব ক্ষেত্রে তেলযুক্ত ম্যানিকিওর ব্যবহার করাই শ্রেয়।
১০। শক্ত নেইল পলিশ পরিহারঃ নেইল পলিশ বাছাইয়ের সময় প্যারাবেন বা সালফেট যুক্ত নেইল পলিশ পরিহার করা উচিৎ। এগুলো নখ ও আশেপাশের ত্বকের ক্ষতি করে। এছাড়াও নেইল পলিশ যুক্ত হাত দিয়ে খাওয়াও উচিৎ নয়। হঠাৎ করে নেইল পলিশের অংশ খুলে খাবারের সঙ্গে মুখে চলে যেতে পারে।
১১। নখ বাফিংঃ নেইল পলিশ হল কৃত্রিম রাসায়নিক পদার্থ যা ত্বক ও নখ উভয়ের জন্যই ক্ষতিকারক হতে পারে। তাই আপনি এর পরিবর্তে ব্যবহার করতে পারেন প্রাকৃতিক উপায় যা নখকে উজ্জ্বলতা দান করবে। বাফিং এর মাধ্যমে উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অতিরিক্ত নখ ও চেঁছে ফেলা যায়।
১২। নখ সমানভাবে কাটাঃ নখ কাটার সময় অবশ্যই সমানভাবে কাটতে হবে। নখ বেশি লম্বা না করাই ভালো। এতে পরিষ্কারও থাকবে আবার দেখতেও পরিচ্ছন্ন লাগবে। এছাড়া নখ বেশি লম্বা করলে তা ত্বকের ক্ষতি সাধন করে।
১৩। ভালো রিমুভার ব্যবহারঃ কম কেমিক্যাল দ্রব্য ব্যবহার করে তৈরিকৃত রিমুভার ব্যবহার করা উচিৎ। এছাড়াও ভালো ব্র্যান্ড এর দিকেও খেয়াল রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
১৪। ভালো খাবার খাওয়াঃ নখ ভালো রাখতে খাবারের দিকেও নজর রাখতে হবে। খাবারে পর্যাপ্ত পরিমান ক্যালসিয়াম থাকা দরকার। এছাড়াও ভিটামিন ই, প্রোটিন, আয়রন, ভিটামিন ডি, জিঙ্ক, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি পাওার জন্য আপনার খাবারে বাদাম, ডাল, শস্যদানা ইত্যাদি রাখা জরুরী।