তিন বছরের পরের যুগ – আবু বক্কর (রাঃ) 
তিন বছরের পরের যুগ – আবু বক্কর (রাঃ)
এই জনমত ও জনশক্তি চতুর্থ বছরে মহানবীকে প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার করার জন্যে অনুরোধ জানাতে থাকল। মহানবী তাদের কথায় এবার কর্ণপাত করলেন। প্রকাশ্যে ঘোষণা করলেন, ইসলাম কি চায়, তার মূল বক্তব্য কি। তখন কোরাইশ প্রধানগণ চিন্তা করল, যদি এইভাবে বিনা বাধায় মহানবীকে তাঁর বক্তব্য প্রচারে স্বাধীনতা দেওয়া যায়, তাহলে তাদের পিতা-মাতার ধর্ম অচিরেই বিলোপ পাবে। তারা মহানবীকে বাধা দেওয়ার জন্যে বদ্ধপরিকর হল। আরম্ভ হলো অত্যাচার ও উৎপীড়নের পালা। আবুবকর পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পেরে সর্বদা মহানবীর সঙ্গে থাকার চেষ্টা করলেন। সমস্ত বিপদের ঝুঁকি তিনি মাথায় নিলেন। একদা আরব কোরাইশগণ মিলিতভাবে একটি বিশেষ স্থানে গভীরভাবে চিন্তায় মগ্ন আছেন, কি করে মহানবীকে তাঁর প্রচার হতে, ব্রত হতে বিরত করা যায়। এই কার্য সমাধা করতে যে কোন প্রকারের কৌশল, ষড়যন্ত্র গ্রহণ করতে তারা এক মারাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আজ তারা সকলেই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, হয় তারা থাকবে, কিংবা মহানবী থাকবেন। তাদের স্থির সিদ্ধান্ত ছিল দুটো জিনিস একসাথে আরবে থাকবে না। হেন কালে ঐ পথ ধরে মহানবী একাকী যাচ্ছিলেন তিনি দেখলেন, কিছু সংখ্যক মানুষ একত্রে বসে কি যেন আলোচনা করছে। স্বভাবে সুন্দর, ব্যবহারে বিনম্র মহানবী চিন্তা করলেন, একবার ওদেরকে মহান আল্লাহর কথা বলে দেখি, কেননা তিনি ছিলেন প্রচারক, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী। এটা ছিল তাঁর মহান কর্তব্য। তিনি তাই কর্তব্যের খাতিরে তাদেরকে আল্লাহর কথা বলা মাত্র তারা অনতিবিলম্বে মহানবীর ওপরে নেকড়ে বাঘের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁকে প্রচণ্ড প্রহারে একেবারেই জ্ঞানহারা করে ফেলেন। আল্লাহর নবী ক্ষত-বিক্ষত অবস্থায় পড়ে আছেন। একথা আবুবকর (রাঃ)-এর কর্ণগোচর হওয়া মাত্র তিনি আর কালবিলম্ব না করে সেখানে গমন করতে অসভ্য কোরাইশদের একাকীই সিংহবিক্রমে মোকাবিলা করলেন। বজ্রকণ্ঠে তিরস্কার করলেন মোশরেকদের। মহানবীকে উদ্ধার করে বাড়ি পাঠালেন। কিন্তু মোশারেকগণ কিছুক্ষণের মধ্যে আবুবকর (রাঃ)-কে সদলবলে আক্রমণ করে তাঁর শরীরকে রক্তাক্ত করে তোলে। এই পৈশাচিক ঘটনার কথা অন্যান্য মুসলমানদের কানে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সকলেই জীবন মরণ পণ করে বেরিয়ে পড়েন। উদ্ধার করলেন আবুবকর (রাঃ)-কে। তিনি জ্ঞান ফিরে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জিজ্ঞেস করলেন, মহানবী কোথায়, কেমন আছেন। ঐ সময় বহুবার এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। ঐদিনগুলোতে ক্ষত-বিক্ষত মহানবীর পাশে ছিলেন আঘাতপ্রাপ্ত আবুবকর (রাঃ)।