গর্ভে অবস্থান কালে মাতার উপকার
গাওসুল আযম হযরত বড় পীর সাহেব তাহার মাতার গর্ভে অবস্থান কালেই নানাভাবে তহাির। অলৌকিকতা প্রকাশ পাইতে থাকে এবং ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরেও বাল্যকালে আরও অনেক কারামত প্রকাশিত হয়। আমরা যথাস্থানে উহ উল্লেখ করিব। তিনি মাতার উদরে অবস্থান কালেই কিরূপে মাতাকে বিপদ হইতে উদ্ধার করিয়াছিলেন, এখানে শুধু তাহাই বলিতেছি।
হযরত বড় পীর সাহেবের মাতা উম্মুল খায়ের ফাতেমা গর্ভবতী থাকা কালে একদিন দ্বারদেশে একজন ভিক্ষুক আসিয়া বলিল—বাড়ীতে কে আছেন? আমি বড় ক্ষুধার্ত, দয়া করিয়া আমাকে কিছু খাইতে দিন।
সেই সময় হযরত বড় পীর সাহেবের মাতা ব্যতীত বাড়ীতে পুরুষ মানুষ কেহই ছিল না, সেই জন্য ভিক্ষুকের প্রার্থনার উত্তরে কেহ কিছু বলিল না। ভিক্ষুক পুনরায় বলিল যদি কেহ বাড়ীতে থাকেন, তবে অবিলম্বে কিছু খাদ্য প্রদান করিয়া এই ক্ষুধার্ত পথিকের জীবন রক্ষা করুন আমি ক্ষুধার জ্বালায় আর এক পাও অগ্রসর হইতে পারিতেছি না।
ভিক্ষুরে কাতর প্রার্থনায় উম্মুল খায়ের ফাতেমার কোমল হৃদয়ে দারুণ আঘাত লাগিল। তিনি স্থির থাকিতে না পারিয়া পর্দার অন্তরাল হইতেই কিছু খাদ্য ভিক্ষুককে আগাইয়া দিলেন। ভিক্ষুক বুঝিতে পারিল বাড়ীতে অন্য কেহ নাই। তখন তাহার মনে কুপ্রবৃত্তি মাথাচাড়া দিয়া উঠিল। সে বাড়ীর ভিতরে প্রবেশ করিয়া বিবি ফাতেমার উপরে বলপ্রয়ােগ করিতে উদ্যত হইল।
দুবৃত্ত ভিক্ষুকের স্পর্ধা দেখিয়া বিবি ফাতেমা ভয়ে থর থর করিয়া কাঁপিতে লাগিলেন এবং সেই পাপিষ্ঠের কবল হইতে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করিলেন।
সেই সময় হযরত বড় পীর সাহেব স্বীয় মাতার বিপদ দর্শন করিয়া স্থির থাকিতে পারিলেন না। তাহার পবিত্র রুহ সেই মুহূর্তে মাতার উদর হইতে বাহির হইয়া আসিয়া একটা ভীষণ ব্যাঘ্রের মূর্তি ধারণ করিল এবং মুহূর্তের মধ্যে সেই পাপিষ্ঠ ভিক্ষুকের প্রাণ সংহার করিয়া পুনরায় তার উদরে প্রবেশ করিল।
তখন মাতা অবশ্য বুঝিতে পারেন নাই যে, তাঁহারই গর্ভস্থ সন্তানের রূপ ব্যারূপ ধারণ করিয়া পাপিষ্ঠ ভিক্ষুককে সংহার করিল। পরবর্তীকালে হযরত বড় পীর সাহেবের বাল্যজীবনে একদা তাহার মাতা কোন
কারণে পুত্রের প্রতি রাগান্বিতা হইয়া বলিলেন-হে অকৃতজ্ঞ পুত্র! তােমার প্রতি আমার স্নেহ-যত্নের কথা কি একেবারেই ভুলিয়া গিয়াছ?
তদুত্তরে হযরত বড় পীর সাহেব বলিলেন-হে আমা! আপনি কি আমার উপকারের কথা ভুলিয়া গিয়াছেন? আপনি যখন পাপিষ্ঠ ভিক্ষুকের কবলে পড়িয়া সতীত্বনাশের আশংকায় ভীত হইয়া পড়িয়াছিলেন, তখন কে আপনাকে বাথ্ররূপে আসিয়া রক্ষা করিয়াছিল?
হযরত বড় পীর সাহেবের মাতা সেইদিন বুঝিতে পারিলেন যে, তাহারই গর্ভস্থ সন্তান ব্যাঘ্ররূপে আত্মপ্রকাশ করিয়া তাহাকে বিপদ হইতে উদ্ধার করিয়াছিলেন।